পরীক্ষার খাতায় লেখার কৌশল
লিখিত পরীক্ষায় উত্তর প্রদান ও খাতা উপস্থাপন কৌশল
আস্সালামু আলাইকুম ।
সুপ্রিয় এসএসসি /এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থী বন্ধুদের শুভেচ্ছা। পরীক্ষা জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি কেবল শিক্ষাজীবনের একটি বড় পরীক্ষাই নয়; বরং ভবিষ্যতের উচ্চশিক্ষা ও পেশাগত জীবনের জন্য মাইলফলক। জীবনের প্রতিটি ধাপে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। এ সময়টুকু তোমাদের অত্যন্ত আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। পরীক্ষার আগ মুহূর্তে দুশ্চিন্তা না করে সময়ের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল সবারই কাম্য। নিজের সেরাটা দিলেই অর্জন করা যায় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। এজন্য পরীক্ষার প্রস্তুতিও হওয়া চাই সেরা।
পরীক্ষায় ভালো করার জন্য যেসব বিষয়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে-
প্রশ্ন বুঝা:
পরীক্ষায় ভালো নম্বরের প্রাপ্তির অনেকটা নির্ভর করে প্রশ্ন ভালোভাবে বুঝতে পারার উপর। প্রথমে প্রশ্নের উপরের অংশটুকু ভালভাবে পড়বে। কোন বিভাগ বা গ্রুপ থেকে কয়টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, কোনো বাধ্যতামূলক প্রশ্ন আছে কিনা ইত্যাদি ভালো করে দেখা। প্রশ্নের মানবন্টন ভালোভাবে দেখে নিবে, তারপর উত্তরের জন্য কতটুকু সময় ব্যয় করবে তা হিসাব করে বন্টন করে নেবে বা মনে মনে ছক করে নেবে। পুরো প্রশ্নটি অন্তত দু’বার ভালোভাবে পড়ে নিবে। এই সময়ে তোমার মস্তিস্ক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিতে চেষ্টা করবে। প্রশ্নের কী-ওয়ার্ড বা গুরুত্বপূর্ণ অংশটি মার্ক করে নিবে। এতে সঠিক উত্তরটি লেখা সহজ হবে এবং কোনো কিছু বাদ পড়ার আশংকা থাকবে না।
খাতা প্রস্তুত করা:
পরীক্ষার্থীর নাম, রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর লেখার এবং খাতায় মার্জিন টানার জন্য সাধারণত পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট আগেই উত্তরপত্র দেয়া হয়। রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর মুখস্থ থাকলেও এডমিট কার্ড দেখে লেখো, তাহলে ভুল হবে না। এগুলো ভুলের জন্য অনেকের রেজাল্ট স্থগিত থাকে। উত্তরপত্র চেক করে নিবে, কোনো পাতা ছেঁড়া বা ময়লা আছে কিনা। থাকলে তা পরিদর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পরিবর্তন করে নিবে। উত্তরপত্রের কভার পৃষ্ঠায় নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া ওই পৃষ্ঠার অন্য কোনো স্থানে কিছু লেখা বা দাগ দেবে না। কোনোক্রমেই উত্তরপত্রের অভ্যন্তরে কোনো জায়গায় পরীক্ষার্থীর নাম, রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, মোবাইল নম্বর, স্কুল বা কলেজের নাম, কেন্দ্রের নাম ইত্যাদির কোনোটিই লেখা যাবে না।
সব তথ্য সঠিকভাবে লেখা হয়েছে, এটি নিশ্চিত হওয়ার পর স্কেল, পেন্সিল ব্যবহার করে উত্তরপত্রের প্রতি পৃষ্ঠায় ওপরের দিকে দেড় ইঞ্চি এবং বাঁয়ে ১ ইঞ্চি মার্জিন করবে। এ ছাড়া উত্তরপত্রের প্রতি পৃষ্ঠার ডান দিকে ও নিচের দিকে হাফ ইঞ্চি ফাঁকা রাখা উচিত। অনেক পরীক্ষার্থী উত্তরপত্রের ওপরে ৩ ইঞ্চি এবং বাঁয়ে ২ ইঞ্চি মার্জিন করে থাকে। এ ধরনের মার্জিনের ফলে উত্তর লেখার জন্য প্রতি পৃষ্ঠার খালি জায়গা কমে যায়। তাই উত্তরপত্রে এটা করা উচিত নয়।
উত্তরপত্রে মার্জিনের জন্য তোমরা অনেকে বিভিন্ন রঙের সাইন পেন ব্যবহার করে থাক। এটি ঠিক নয়। মার্জিনের জন্য তোমরা ভালো কোনো পেনসিল বা কালো/নীল বল পয়েন্ট কলম ব্যবহার করতে পারো। অনেক সময় কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় অনেকেই প্রশ্নের নম্বরটি ভালোভাবে লেখে না। উত্তরপত্রের বাঁ দিকে খুব ছোট করে প্রশ্নের নম্বরটি লিখে থাকে। এতে পরীক্ষার জন্য কোন প্রশ্নের উত্তর লেখা হয়েছে তা বুঝতে পরীক্ষকের অসুবিধা হয়। তাই প্রশ্নের নম্বরটি উত্তরপত্রের মাঝ বরাবর স্পষ্টভাবে লিখবে এবং নিচে একটি দাগ দিয়ে দেবে। যেমন- ১নং প্রশ্নের উত্তর/Ans. to the ques. No. 1. ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয়পত্রের উভয় পরীক্ষায় অবশ্যই প্রশ্নের নম্বরটি ইংরেজিতে দেবে।
অনেককে দেখা যায়, প্রতি পৃষ্ঠার শেষে বড় বা ছোট করে P.T.O/ পরের পৃষ্ঠায় দেখুন/চলমান পাতা- লিখে থাকে। এগুলো লিখে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। কারণ একজন পরীক্ষকের মূল দায়িত্ব হলো কোনো পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা করে সঠিক নম্বর প্রদান করা। আবার অনেকে উত্তরপত্রে বিভিন্ন শিরোনাম/ পয়েন্ট লেখার সময় বিভিন্ন রঙের কালি ব্যবহার করে থাকে। এটি করার দরকার নেই। উত্তরপত্রে কালো বা নীল কালি ছাড়া অন্য কোনো কালি (লাল/সবুজ) পরীক্ষকসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ব্যবহার করে থাকেন। তোমরা কেবল কালো এবং নীল কলম ব্যবহার করবে।
কাটাকাটি বা ঘষামাজা না করা:
যদিও হাতের লেখার উপর কোনো মার্কস নেই তবুও সুন্দর হাতের লেখা শিক্ষকের মন কাড়ে ও বেশি নম্বর পাওয়ার সুযোগ থাকে। হাতের লেখা খারাপ হলেও সমস্যা নেই, তবে অক্ষরগুলো যেনো স্পষ্টভাবে পড়া যায়। ভুল হলে ওভাররাইট না করে একটানে কেটে দিতে হবে। একাধিকবার কাটবে না কিংবা বিশ্রীভাবে কাটাকাটি করবে না। ওভার রাইটিং করলে, পরীক্ষক বিরক্ত হয়। ফলে পরীক্ষার্থীকে নম্বর কম দিতে পারেন। অংকের ক্ষেত্রে ভুল হলে কখনো ওভাররাইট করবে না। সংখ্যাটি পুনরায় তুলবে, সম্ভব হলে সম্পূর্ণ অংকটি পুনরায় সমাধান করবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অংকের রাফ বা খসড়া সমাধানের পাশে লিখে আলাদা করে ব্লক করে দিবে, যাতে পরীক্ষক বুঝতে পারে। বেশি রাফ করার ক্ষেত্রে পৃথক পৃষ্ঠা ব্যবহার করে উত্তরে ‘রাফ’ কথাটা লিখে দিবে।
দু'লাইনের মাঝে ফাক :
অনেক পরীক্ষার্থী দু'লাইনের মাঝে ফাঁক রাখে বেশি। তারা এক লাইনে শব্দ লিখে পাঁচটি এবং প্রতি পৃষ্ঠায় মাত্র ৭/৮ লাইন উত্তর লিখে। পরীক্ষক এ ধরনের পরীক্ষার্থীকে অতিচালাক মনে করে। তারা পরীক্ষার খাতাভারী করে। কিন্তু নম্বর কম পায়।
প্রশ্নের ধারাবাহিকতা ঠিক রেখে উত্তর লিখবে :
পরীক্ষার খাতার প্রশ্নোত্তরের ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে। যেমন- ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ২ নম্বর, আবার ৭ নম্বর লিখে ৩ নম্বর, এভাবে উল্টা-পাল্টা উত্তর লিখলে ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়। এতে পরীক্ষক বিরক্ত হন। ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নোত্তর লিখলে পরীক্ষক খুশী হন। বেশি নম্বর পাওয়ার জন্য খাতার মধ্যে বৈচিত্র থাকতে হবে। উত্তরের মধ্যেও থাকতে হবে নতুনত্ব। নতুন কিছু দেখানোর মতো বৈশিষ্ট থাকলেই খাতাটির ব্যাপারে পরীক্ষকের কৌতহল জন্মাবে এবং বেশি পরীক্ষার্থীর বেশি নম্বর পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বণ্টন ও সময় বিভাজন:
প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই নম্বর বণ্টন ও সময় বিভাজন সম্পর্কে খুবই সচেতন থাকতে হবে I প্রশ্নের ধরন এবং মান বুঝে উত্তরের সময় বরাদ্দ করবে। কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর ভালো জানা আছে বলে অধিক সময় ধরে লেখা যাবে না। পরীক্ষায় সময় ব্যবস্থাপনা পরীক্ষার্থীর জন্য সাফল্যের একটি উপায়। প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য নির্দিষ্ট সময় ধরে উত্তর প্রদান করবে। পরীক্ষায় কোনো প্রশ্নের উত্তর ছেড়ে আসবে না। ২/১টি প্রশ্ন জানার বাইরে এলে বুদ্ধি খাটিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করবে। চিত্র অংকনের ক্ষেত্রে অবশ্যই পেন্সিল ব্যবহার করবে এবং চিত্রের নিচে ক্যাপশন দিবে। তবে চিত্রের ক্যাপশন বা লেবেলিং কলম দিয়ে করতে পারো। প্রশ্নে বা উদ্দীপকে প্রদত্ত কোনো চিত্রের ব্যাখ্যা প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই উত্তরের বর্ণনায়ও প্রদত্ত চিত্রটি আঁকা বাঞ্চনীয় হবে। পদার্থ, জীববিজ্ঞান, আইসিটি প্রভৃতি বিষয়ের ক্ষেত্রে উদ্দীপকের গ ও ঘ উত্তরে ছবি না চাইলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট উত্তরের চিত্র দিতে হয়, অন্যথায় পুরো মার্কস পাওয়া যায় না।
সবগুলো উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা:
কোনো প্রশ্ন যদি একেবারেই কমন না থাকে তাহলে ভয় পাবে না, তাহলে যা জানো তাও ভুলে যাবে। উদ্বিগ্ন না হয়ে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করবে, আত্মবিশ্বাস রাখবে। প্রশ্নটি বারবার পড়বে, মনে করার চেষ্টা করবে। তাহলে কিছুটা হলেও মনে পড়বে, লিখতে পারবে। কমন না পড়া প্রশ্নগুলো একেবারে ছেড়ে আসবে না, যতটুকু পারো টাচ করবে। মোটামুটি ধারণা করে যতটুকু মনে পড়ে শেষ সময়ের দিকে লেখার চেষ্টা করবে। যদি সময়ের অভাবে পুরো উত্তর লিখতে না পারো, তাহলে উত্তরের মূল অংশটুকু দেয়ার চেষ্টা করবে, তাহলে কিছুটা হলেও নম্বর পাবার আশা থাকবে।
রিভিশন:
পরীক্ষার হলে রিভিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরীক্ষায় রিভিশন ভুল-ত্রুটি সংশোধনের একটি সুযোগ তৈরি করে দেয়। তাই অন্তত ১০ মিনিট আগে সম্পূর্ণ লেখা শেষ করেই পুরো উত্তরপত্র রিভিশন দিবে। এতে অনিচ্ছাকৃত অনেক ত্রুটি সংশোধন করতে পারবে। ফলে কাঙ্ক্ষিত নম্বর পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত হবে।
সবার জন্য শুভকামনা।
Thanks for nice post.
ReplyDeleteGD Writing
ReplyDeleteThank you, sir.
ReplyDeleteG8 writing. Really helpful.
ReplyDeleteপরীক্ষার হলে রিভিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরীক্ষায় রিভিশন ভুল-ত্রুটি সংশোধনের একটি সুযোগ তৈরি করে দেয়। তাই অন্তত ১০ মিনিট আগে সম্পূর্ণ লেখা শেষ করেই পুরো উত্তরপত্র রিভিশন দিবে।
ReplyDeletenice post.
ReplyDeleteBest of luck, sir.
ReplyDeleteNazir Sabri is a very good teacher. He has very good quality to inspire students. Thanks, sir.
ReplyDelete